
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তির লড়াই ও আজকের প্রেক্ষাপট শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
‘ঊনসত্তরই একাত্তরের ভিত্তি নির্মাণ করেছিল’ -জোনায়েদ সাকি
আজ ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার বিকেল ৪ টায় ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সেমিনার কক্ষে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তির লড়াই ও আজকের প্রেক্ষাপট শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচনা করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আহমেদ কামাল, অর্থনীতিবিদ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগঠক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং দি ডেইলি নিউ এজ এর সম্পাদক নূরুল কবির ও শহীদ আসাদের বড়ভাই ইঞ্জিনিয়ার রশিদুজ্জামান। আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য উত্থাপন করেন গণসংতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ।
আলোচনায় ফিরোজ আহমেদ বলেন, জোচ্চুরির নির্বাচন আয়োজন করার কারণে ৬৯ সালে আইয়ুর খানের নির্বাচন কমিশনারকে ছাত্ররা কান মলে দিয়েছিলেন। সেসময় কৃষকদের সাধারণ দাবি ছল ফসলের ন্যায্য দাম ও ভূমি সংস্কার। বর্তমানে শুধু ফসলের ন্যায্য দামের দাবিটাই তোলা হয়।
আলোচনায় নুরুল কবীর বলেন, ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষকে ইতিবাচক অতীতে ফিরতে হয়। ইতিবাচক রূপান্তরে যাওয়ার জন্য সংগ্রামের ঐতিহ্যে বারবার ফিরে তাকাতে হয়। সাময়িকভাবে স্বৈরতন্ত্রকে মেনে নিলেও মানুষ সবসময়ই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন করে সে ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করেছে। আইয়ুব খানকে পাকিস্তানেন আজীবন প্রেসিডেন্্ট করার কথা ভেবেছিল কেউ কেউ কিন্তু সে ঘোষণা তোষামোদকারী বুদ্ধিজীবীরা দেয়ার ৪ মাসের মধ্যেই তার পতন ভয়ঙ্করভারে সংঘটিত হয়। সারাদেশের শ্রমিক-কৃষকরা ঢাকায় সংগঠিত হয়েছিল। মাওলানা ভাসানীর ডাকে শেখ মুজিবের মুক্তি এবং আসাদের হত্যার (২০ জানুয়ারি) আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে।
ইঞ্জিনিয়ার রশিদুজ্জামান বলেন, আমার কাছে এখনও অনেক না বলা কথা আছে। যা বললে অনেকেই উপকৃত হবেন, ৬৯ যারা দেখেছে। ম্যাচ বাতি দিয়ে কেমন করে আগুন জ্ব!ে ৬৯ এটম বোমার থেকেও মারাত্মক! মানুষ যখন বঞ্চনা নিপীড়নের ভেতর থাকে তখন ৬৯ হয়। গণচেতনা আস্তে আস্তে আন্দোলনে রূপ নেয়। আসাদকে চিন্তিত করেছিল- দেশের মানুষ এতো গরীব কেন? আর অন্যদিকে অল্প ধনীদের এতো সম্পদ কেন? মৌলিক পরিবর্তন করতে হলে দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। ভাসানী অনুধাবন করেছিলেন শ্রমিক-কৃষককে না নামালে দেশের পরিবর্তন হবে না। কৃষকক-শ্রমিককে না জাগালে কোনো কিছুই করা যাবেনা। এখনও ৬৯ এর মতো নিপীড়ন চলছে। এখনও গণঅভ্যুত্থান প্রয়োজন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আজকে যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের অনেকেই ৬৯ সালে মার খেয়েছেন, জেল খেটেছেন। আজকে তারা ৬৯ কে আগের মতো করে দেখেন না। তাদের জবানে ইতিহাসের ব্যাখ্যাকেই একমাত্র ব্যাখ্যা হিসেবে মানুষের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন। ষাটের দশক শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় সারা পৃথিবীর জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দশক। ষাট, নব্বই, এবং সাম্প্রতিক দশক এই তিনটি উন্নয়ন দশকই স্বৈরাচারের হাত ধরে। এর মধ্যে দুটি সামরিক শাসকদের হাত ধরে এবং একটি নির্বাচনের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী শাসকের হাত ধরে। আসাদ কৃষকদের নিয়ে কাজ করতেন। আসাদ-মতিউর সচেতনভাবেই মিছিলে গিয়ে মহীদ হয়। তারা এমনি এমনি মারা যান নি।
অধ্যাপক আহমেদ কামাল বলেন, সামরিক স্বৈরতন্ত্রের নিপীড়ন থেকে আমরা প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্রের নিপীড়নের ভেতরে হাসফাস করছি। এর থেকে আমাদেরকে বের হতেই হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, ঊনসত্তরই একাত্তরের ভিত্তি নির্মাণ করেছিল। ঊন্নয়নের নামে গণতন্ত্রকে সংকুচিত করে আইয়ুব খান টিকতে পারে নি। বর্তমান সরকারও উন্নয়নের নামে মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে মানুষকে চূড়ান্ত অপমান করছে। শুধু উন্নয়নের দোহাই দিয়ে জনগণের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় বেশিদিন টিকে থাকা যায় না। জনগণ ৬৯ এর ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে জনগণ নিজের জীবন ও আত্মমর্যাদার জন্য রাজপথে নামবেন।
এছাড়া আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন হসেবে উপস্থিত থাকবেন ঊণসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম কর্মী টিপু বিশ্বাস, সামসুজ্জামান মিলন, শিল্পী অরূপ রাহী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।